A
though you appear to others (at a distance) as a unique person, to yourself (at no distance), you are boundless and timeless emptiness – awake space that is capacity for the world.
A
They believed that reasoned speculation on the fabric of the world has the power to change our lives
A
বিপিনবিহারীর বিপদ
বিপিনবিহারী বটব্যাল একজন নিপাট ভালমানুষ। পাড়ার কোনও সাতেপাঁচে থাকেন না, বিনা প্রতিবাদে বারোয়ারি পুজোর চাঁদা দিয়ে দেন। এমন মানুষের কী বিপদ ঘটল রে বাবা?
ছুটির সকাল। বাজার থেকে ফিরে সবে খবরের কাগজটি খুলে বসেছি, অমনই বিপিনবাবু এসে হাজির। ধপাস করে সোফায় বসে বললেন, “সুখে আছেন মশাই। এদিকে আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেল।”
অবাকই হলাম একটু। বিপিনবিহারী বটব্যাল একজন নিপাট ভালমানুষ। পাড়ার কোনও সাতেপাঁচে থাকেন না, বিনা প্রতিবাদে বারোয়ারি পুজোর চাঁদা দিয়ে দেন, লোকের বিপদে আপদে যেচে সাহায্য করেন, কারও সঙ্গে ঝগড়া নৈব নৈব চ। এমন মানুষের কী বিপদ ঘটল রে বাবা?
ঘাবড়ে যাওয়া মুখে জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন, হল কী?”
“আর বলবেন না, যা ঝকমারিতে পড়েছি,” বিপিনবাবু পা তুলে বাবু হয়ে বসলেন, “কাল ছিল আমার পেনশন তোলার দিন। সকাল থেকে মেজাজটা ভারী ফুরফুরে হয়ে ছিল। ঘুম থেকে উঠেই ব্যাগ হাতে সোজা চলে গেলাম বাজার। দেখছেন তো, বাজারটার কী হাল! দু ফোঁটা বৃষ্টি হল কি হল না, অমনই কাদায় কাদায় ছয়লাপ । তার ওপর পরশু রাতে এমন জোরে নেমেছিল...”
“পড়ে গিয়েছিলেন নাকি কাদায়? চোট পেয়েছেন? আহাহা, এই বুড়ো বয়সে...”
“না না, পড়ব কেন! আমি মশাই গাঁয়ের ছেলে, কাদায় হাঁটা আমাদের অভ্যেস আছে। জানেন তো আমার দেশ কোথায়? ন্যাজাট। ওখানে আপনাদের শহুরে শৌখিন কাদা নয়, রীতিমতো এঁটেল মাটি। পা একবার কাদায় ঢুকল, তো বেরনোর পরে আস্ত কাদার গামবুট। ওই কাদায় কত হাডুডু খেলেছি, ফুটবল পিটিয়েছি, আপনাদের শহরের ওই কাদা আমার কী করবে!”
একটু আশ্বস্ত হয়ে বললাম, “যাক, আঘাত পাননি তা হলে?”
“প্রশ্নই ওঠে না।”
পকেট থেকে ডিবে বের করে বিপিনবাবু নস্যি নিলেন এক টিপ, “তা কাদা মাড়িয়ে ঢুকলাম তো মাছের বাজারে। ঢুকেই ভিমরি খাওয়ার জোগাড়।”
“কেন? কেন? কা দেখলেন সেখানে?”
“ইয়া বড় বড় ইলিশ! আহা, কী তাদের রং, কী রূপ! গায়ে যেন রুপো ঝিলিক কাটছে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথাকার মাছ ভাই? বলল, কোলাঘাটের। এমন মাছ আর এ বছরে আসেনি বাবু। নিয়ে যান, ঠকবেন না। ব্যস, অমনই লোভে পড়ে গেলাম। কিনে ফেললাম একখানা দেড় কেজির ইলিশ।”
“বুঝেছি। ওই ইলিশই কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে। মাছ পচা বেরোলো তো?”
“দূর মশাই, বিপিন বটব্যালকে মাছে ঠকাবে। আমার হল গিয়ে জহুরির চোখ। কানকো দেখে বলে দেব সে মাছ কখন জালে পড়েছে।”
“তা হলে? বউদি কি ইলিশ মাছ পছন্দ করেন না?”
“বলেন কী মশাই! সে তো ইলিশ তোলা তোলা করে খায়। সে কাঁটাচচ্চড়ি খাবে বলে পুঁইশাক আনলাম, সঙ্গে কুমড়ো-বেগুন-ঝিঙে, বাজার ঢুঁড়ে ঢুঁড়ে অসময়ের মুলো...”
“বাহ, এ তো ভাল ব্যাপার। এতে ঝকমারিটা কোথায়? রান্নাটা বুঝি জুতের হয়নি?”
“আমার গিন্নির হাতের রান্না তো খাননি... অমৃত মশাই, অমৃত। অমন উত্তম ইলিশ ভাপা একবার খেলে মৃত্যু পর্যন্ত জিভে লেগে থাকবে। নিজেকে সামলাতে পারলাম না মশাই, লোভে পড়ে একটার জায়গায় তিন পিস খেয়ে ফেললাম।”
“ও মাছ খেয়েই সর্বনাশ? বুক আইঢাই? অম্বল? বদহজম?”
“আজ্ঞে না স্যার। ওসব মিনমিনে রোগ হবে আজকালকার ছেলেছোকরাদের। যারা ব্রয়লার মুরগি, কাটা পোনা ছাড়া কিছু খেতে শেখেনি। আগে আগে তো নেমন্তন্ন বাড়িতে আমার খাওয়া দেখতে ভিড় জমে যেত। একবার ছেষট্টি পিস মাছ খেয়েছিলাম বিয়েবাড়িতে। সঙ্গে পঁচাশিটা রসগোল্লা। রস চিপে নুন মাখিয়ে নয়, রসসুদ্ধ।” বলতে বলতে বিপিনবাবুর চোখ জ্বলজ্বল, “শরীরের জোশ এখনও যায়নি মশাই। এখনও লোহা চিবিয়ে হজম করতে পারি।”
আমার ধন্দ লেগে যাচ্ছিল। এমন মহান শক্তিসম্পন্ন লোকের বিপদ এল কোত্থেকে? মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, “তা হলে? সর্বনাশটা কী?”
“সেটা বলতেই তো আসা।” বিপিনবাবু নড়ে বসলেন, “তারপর তো বুঝলেন, খেয়েদেয়ে তো বেরোলাম। ছাতাটি বগলে নিয়ে। মোড়ে গিয়ে পান খেলাম একটা। পান অবশ্য রোজ খাই না। যেদিন আহারটি উত্তম হয়, সেদিন আমার পান একটা চাইই। মিষ্টি পান। তাতে গদগদে করে গুলকান্দ দেওয়া থাকবে, খাবলা করে চমনবাহার। এবং পাতাটিও হবে মিঠে।”
লোকটার এই দোষ। বড্ড বেশি বকে। কিছুতেই মূল প্রসঙ্গে আসতে চায় না। অধৈর্য্যভাবে বললাম, “নিশ্চয়ই পান থেকে আপনার কোনও বিপত্তি হয়নি?”
আমার কথার বাঁকা সুরটি টের পেয়েছেন বিপিনবাবু। হেসে বললেন, “চটেন কেন, শুনুনই না। পানের পিকটি ফেলে বাসস্টপে এসে দাঁড়িয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে বাস। উঠলাম তো বাসে, আর তখনই...”
“গা গুলিয়ে উঠল?”
“বললাম তো আপনাকে, আমি সেই ধাতুতেই গড়া নই। ভরপেট খেয়ে কতবার নাগরদোলায় চড়েছি, একটি দিনের তরেও গা গুলোয়নি।”
“তা হলে হলটা কী? পকেটমার ছিনতাইবাজের পাল্লায় পড়লেন?”
“উঁহু। ছেলেবেলার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। হরিসাধন। একসঙ্গে স্কুলে পড়তাম আমরা। হরিসাধনটা ছিল বেজায় ডানপিটে। স্কুলের পেছনে একটা নারকোলগাছ ছিল। টিফিনের সময় গাছটায় তরতর উঠে গিয়ে ডাব পেড়ে আনত। যাদের গাছ তাদের সঙ্গে এই নিয়ে যে কত ঝামেলা হয়েছে! একবার হেডসারের কাছে কমপ্লেন ঠুকে দিল। আমাদের হেডসার ছিলেন বেজায় কড়া। তাঁর দাপট কী ছিল, বাপস্! একবার চোখ লাল করে তাকালে আমরা ভয়ে শুকিয়ে যেতাম। সেই হেডসার গুনে গুনে পঁচিশ বেত লাগিয়েছিলেন হরিসাধনকে। বেচারার হাতের চেটো ফুলে ঢোল, অথচ বাড়িতে বলতেও পারছে না, প্রহারের কারণ শুনলে তাঁরাও ছেলেকে উত্তম মধ্যম দেবেন...। বাজারে একটা বরফের দোকান ছিল, সেখান থেকে বরফ এনে রুমালে বেঁধে পুলটিস লাগানো হল হরিসাধনের হাতে। তাতেও কি হরিসাধনের দৌরাত্ম্য কমেছিল? একটুও না। একদিন তো নিজেরই বাড়ির আমগাছ থেকে আম চুরি করতে গিয়েছিল...। হরিসাধনদের ওই আম গাছখানায় কী ভাল আম যে হত! খিসারিপাতি। কী মিষ্টি! কী মিষ্টি। আপনাকে যে কী করে বোঝাই! ওই আম মুখে দিলে টের পাওয়া যায় কেন আমকে রসাল বলে।”
মেন লাইন ছেড়ে কর্ড লাইনে ঢুকে পড়েছেন বিপিনবিহারী। বাধ্য হয়ে গলাখাঁকারি দিতে হল, “তা সেই হরিসাধনবাবুর সঙ্গে দেখা হওয়ার সুবাদেই কি...?”
“ছি ছি!” বিপিনবাবু এক হাত জিভ কাটলেন, “পুরনো বন্ধু কখনও বিপদে ফেলতে পারে? তাও আবার হরিসাধনের মতো বন্ধু? যেমন ডাকাবুকো, তেমনই বন্ধুবৎসল। কতবার যে বন্ধুদের জন্য ও মারপিট করেছে।”
“কাল নিশ্চয়ই ওকে তেমনটি করতে হয়নি?”
অতি কষ্টে থামালাম বিপিনবিহারীকে।
“না না, মারামারি করার বয়স আর আমাদের কোথায়!” বিপিনবাবু লজ্জা পেলেন, “তবে হরিসাধন এখনও দিব্যি তাগড়াই আছে। পুলিশে চাকরি করতো তো! ঢুকেছিল এএসআই হয়ে, রিটায়ার করেছে ডিএসপি পোস্ট থেকে। বেশ অনেকটাই উঠেছিল, কি বলেন?”
“তবে তার সঙ্গে আমার সর্বনাশের কোনও সম্পর্ক আছে বলে তো মনে হয় না।”
“নেইই তো।” বিদ্রুপের খোঁচাটা হজম করে নিলেন বিপিনবিহারী। এতটুকু অপ্রতিভ না হয়ে বললেন, “তবে কী জানেন, হরিসাধন আমায় অবাক করে দিয়েছে।”
“কি রকম?”
“আমি যে ব্যাংক থেকে পেনশন তুলি, ওরও পেনশন সেই ব্যাংকেই। হরিসাধন তিন বছর হল রিটায়ার করেছে। আমিও তাই। অথচ আমাদের দু’জনের এর মধ্যে একবারও দেখা হয়নি। একই রুটের বাসে যাই, সেখানেও না। এই নিয়ে আমরা দু’জনে জোর একচোট হাসাহাসি করলাম।”
“তারপর?”
“তারপর বাস থেকে নেমে দু’জনেই গুটিগুটি পায়ে ব্যাংকে।”
“তখনই বুঝি কিছু ঘটল। মানে কোনও ফ্যাসাদে পড়লেন?”
“ব্যাংকে আবার কীসের ফ্যাসাদ? মাঝে মাঝে আমাদের মতো পেনশনারদের লাইনটা বড্ড বড় হয়ে যায়, এই যা! তা আমি তো খেয়েদেয়েই বেরোই, বাড়ি ফেরার কোনও তাড়া থাকে না, আমার অসুবিধেই বা কিসের! আর কাল তো কপাল গুনে কাউন্টার ফাঁকাই ছিল। দু’জনেই টাকা পকেটস্থ করলাম, তারপর গিয়ে বসলাম কার্জন পার্কে। বোঝেনই তো, এতকাল পরে দেখা… কতকাল পর জানেন? পাক্কা চল্লিশ বছর। শেষ যখন দেখা হয়েছিল তখন ও বিএ পরীক্ষায় গাড্ডু মেরে ফ্যা ফ্যা করে বেড়াচ্ছে, আর আমি সবে রেলের চাকরিতে ঢুকেছি। অ্যাদ্দিনের জমা কথা কি সহজে ফুরোয়? হরিসাধন ওর পুলিশ জীবনের এককাঁড়ি রোমহর্ষক কাহিনি শোনালো। আমিও আমার অফিসের গালগপ্প করলাম। আড্ডা মারতে মারতে কখন বিকেল চারটে। হরিসাধন বলল, ‘চলো অনেকদিন ডেকার্স লেনের ঘুগনি খাইনি, আজ জম্পেশ করে ঘুগনি আলুর দম সাঁটাই। আমার তখনও পেট গজগজ, তবুও জিভটা কেমন শুলিয়ে উঠল। ডেকার্স লেনের ঘুগনি জানেন তো? দারুণ ফেমাস। পাতলাও নয়, ঘনও নয়, মটর শক্তও নয়, গলা গলাও নয়, ঝালমশলা একেবারে মাপা। শাস্ত্রে বলেছে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। শাস্ত্রবচন উপেক্ষা করে নিয়েই নিলাম এক প্লেট। সেটা সাবাড় করেও থামতে পারলাম না, ফের এক প্লেট নিলাম।”
“বুঝেছি। সেই ঘুগনি খেয়েই পেট খারাপ? সকাল থেকে ক’বার গেলেন বাথরুমে?”
“ধুস, বললাম না আপনাকে, আমার কখনও পেটের অসুখ হয় না। সামান্য দু’ প্লেট ঘুগনি আমার কী করবে?”
“ও!” হতাশ গলায় বললাম, “তা হলে?”
“তা হলে আর কী! আমি আর হরিসাধন ঘুগনি সাঁটিয়ে উঠে পড়লাম। ও গেল মেয়ের বাড়ি শ্যামবাজার, আর আমি উঠলাম ফিরতি বাসে। তখন সবে ছুটি হয়েছে, বাসে রীতিমতো ভিড়। কোনওরকমে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছি, পকেটে পেনশনের টাকা… আমার মতো রিটায়ার্ড মানুষের সারা মাসের সম্বল…”
“হায় হায়, টাকাটাই গেল তো?” খাড়া হয়ে বললাম, “পিকপকেট?”
“মাথা খারাপ! পকেট মারবে আমার? সারাক্ষণ পকেটের হাত চেপে দাঁড়িয়ে, বাছাধনদের সাধ্য কি আঙুল গলায়? তবে তাই বলুন, এক বগলে ছাতা ধরে অন্য হাতে পকেট সামলানো কি মুখের কথা? মনে মনে তখন খুব রাগ হচ্ছিল কেন যে ছাতা নিয়ে বেরোলাম। বলতে পারেন, প্রিয় ছাতাটাকে অভিশাপই দিচ্ছিলাম বেশ।
“সেই প্রিয় ছাতাই বুঝি গেল শেষে?”
“ঠিক উলটো। ছাতাই বরং কাজে লেগে গেল। বাস থেকে নামার পর পরই… ঝেপে বৃষ্টি এল না কাল? হল মাত্র দশ মিনিট, কিন্তু তার কী ভয়ংকর তোড় ছিল বলুন? পেট আমার পোক্ত বটে, তবে ফুসফুস দুটি তো ঝরঝরে। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লেই শুরু হয়ে যায় সর্দিকাশি। দ্যাখ না দ্যাখ, শয্যা নিতে হয়। ওই ছাতার কল্যাণেই কাল বেঁচে গেলাম বলা যায়। টাকাটাও ভিজল না।”
“বাহ্, এ যে দেখি সবই ভাল ভাল ঘটনা।”
“ছাই ভাল। বাড়ি ফিরে কী দেখি জানেন? গিন্নি অন্ধকারে বসে। মুখ কালো করে।”
“কেন? কেন? আপনার দেরি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন বুঝি?”
“হুঁহ্, আমার জন্য উদ্বেগ! সেই কপাল কি করেছি মশাই। ফিউজ উড়ে গিয়েছিল। মেন মিটার থেকে। ভাবুন, এই গরমে যদি কারেন্ট না থাকে…। ইলেকট্রিক মিস্ত্রিদের তো জানেন। ভগবানকে পাওয়া সহজ, কিন্তু তাদের দর্শন মেলা ভার।
“ও। তার মানে সারারাত কাল ঘুমোতে পারেননি? সেদ্ধ হয়েছেন গরমে?”
“তাই হতাম। যদি নিজেই ইলেকট্রিকের কাজ না জানতাম। ওইসব টুকটাক কাজের জন্য আমি মেকানিকের অপেক্ষা করি না মশাই। এই তো গত হপ্তায় আমার জলের কলটা খারাপ হয়ে গেল, আমি থোড়াই প্লাম্বারের পেছনে দৌড়েছি। আমার মশাই আপনা হাত জগন্নাথ। সোজা চলে গেলাম ওয়েলিংটন। কল কিনলাম, পাইপ কিনলাম…। ভাবতে পারবেন না মশাই, ওখানে পাইপ কল সব কী সস্তা। বিশেষ করে চাঁদনি মার্কেটের দিকটায়। এখানে যে জিনিসের জন্য একশো টাকা হাঁকে, ওখানে তার দাম মেরেকেটে ষাট। মিস্ত্রিও কলে হাত দিলে না-হোক নিত পঞ্চাশ-ষাট টাকা। তা হলে কতগুলো টাকা বেঁচেছিল বলুন? তবে কাল ওই অন্ধকারে ফিউজ সারাতে গিয়ে…।
“আহাহা, কারেন্ট খেয়েছেন বুঝি?”
“না মশাই, না। মনের মতো তার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর হঠাৎই মনে পড়ল, আছে তো তার, বাথরুমের লফটে পুরনো তার প্লাস্টিক মুড়ে রাখা আছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই অন্ধকারেই অ্যালুমিনিয়ামের ঘড়াঞ্চিতে চড়ে হাতড়ে হাতড়ে বের করলাম তার। তারপর ফিউজ লাগানো তো দু’মিনিটের কাজ। তবে হ্যাঁ ফিউজের তার লাগাতে হয় খুব মেপেজুপে। বেশি মোটা হলে মেন উড়ে যাবে, বেশি সরু হলে নিজেই ঘন ঘন জ্বলবে। অবশ্য আমার হাত পাকা। একবার যদি ফিউজটি লাগাই, ছ’-আট মাস নিশ্চিন্ত।”
ওরে বাবা! এ যে দেখি রুশি সৈনিক! রোদে পোড়ে না, জলে ভেজে না, আগুনে ঝলসায় না, কারেন্ট খায় না... জাগতিক সমস্ত বিপদই তো টপকে টপকে চলে যান। এমন মানুষের কি বিপদ ঘটা সম্ভব? নতুন করে আর প্রশ্ন করতেও সাহস হচ্ছে না। কোন কথা থেকে বিপিনবাবু কোন কথায় চলে যাবেন ঠাহর করা দায়।
ভয়ে ভয়ে বললাম, “সর্বনাশের কথা পরে হবে, এখন একটু চা খাবেন তো?”
“চা?” বিপিনবিহারীর প্রৌঢ় মুখখানি সহসা খুশিতে উদ্ভাসিত, “অবশ্যই। অবশ্যই। আরে, ওই সর্বনাশের কথাই তো আপনাকে বলতে এসেছি মশাই।”
“মানে?”
“কাল রাত্তিরে ছেলে এসেছিল। কথা নেই, বার্তা নেই, দুম করে দু’দিনের জন্য মাকে নিয়ে চলে গেল। নিজের ফ্ল্যাটে। আপনার বৌদিও হয়েছেন তেমনই। নাতি-নাতনির সঙ্গে মৌজ করবেন বলে তিনিও ড্যাং ড্যাং করে ছুটলেন। আমার রান্নার মেয়েটি আসবে সেই বেলা দশটায়। এদিকে... হেঁ হেঁ... বুঝলেন কিনা... আমি গ্যাসটাও জ্বালতে পারি না। বলুন, এটা কি আতান্তর নয়? সকালের নেশার চা’টা কি আমি রাস্তায় গিয়ে খাব?”
যাক, শেষ পর্যন্ত তা হলে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোল। ঠিকই তো এতবড় বিপদ কারও ঘটে নাকি?
হাসিমুখে বললাম, “সামান্য চা খাবেন এ আর এমন কী? আগে বললেই পারতেন?”
“কী করে বলব? আপনি বলার সুযোগ দিচ্ছেন? তখন থেকে একের পর এক গপ্পো জুড়ে জুড়ে...! ওফ, মাথাটা আমার ধরে গেল মশাই। সক্কালবেলা কী করে যে এত বকবক করতে পারেন! একটা সোজা কথা সোজাভাবে বলব, তারও উপায় নেই?”
হক কথা। ধান ভানতে কে এতক্ষণ শিবের গীত গাইছিল? আমিই তো!
A
This is not a goal that promises pleasure or an escape from death. The Indians and the Greeks both believed in reincarnation, so for them humans didn’t need a greater quantity of life. What we really crave is elevation to a higher quality of existence. ‘Becoming the world’ is a kind of immortality that every philosopher, every astrophysicist, and every daydreamer shares in some measure. Not unlike Plato’s path into the timeless world of pure concepts, the ancient Indian discovery of metaphysics charted a way for aspiring minds to spring the lock of space and time – and fly free.
A
No comments:
Post a Comment